কণা-তরঙ্গ দ্বৈততা [৩.১.১]

আমরা সবাই তরঙ্গের সঙ্গে পরিচিত, তরঙ্গের সঙ্গে তরঙ্গদৈর্ঘ্য, কম্পাংক, পর্যায়কাল ইত্যাদি নানা রাশি সংযুক্ত থাকে, এবং সেটি একস্থান থেকে অন্যস্থানে শক্তি বয়ে নিয়ে যায়। তরঙ্গের একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম হচ্ছে ব্যাতিচার, যেখানে একটি তরঙ্গ অন্য আরেকটি তরঙ্গের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আরও বড়ো বিস্তারের একটি তরঙ্গ তৈরি করে কিংবা একটি তরঙ্গ অন্য তরঙ্গের সঙ্গে বিপরীতভাবে মিলিত হয়ে সম্মিলিত বিস্তার কমিয়ে দেয়। (চিত্র ৩.২) প্রকৃতির একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ তরঙ্গ হচ্ছে তড়িৎ-চৌম্বক তরঙ্গ এবং এই তরঙ্গেরই একটি অংশ, যা আমাদের চোখের রেটিনায় ধরা পরে, তাকে আমরা বলি আলো। অথচ বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, কিছু কিছু জায়গায় দেখা গেছে আলোর আচরণ তরঙ্গের মতো নয়, বরং কণার মতো। একটা কণা যে রকম অন্য কণাকে ঠোকা দিয়ে সরিয়ে দিতে পারে আলো ঠিক সেভাবে ইলেকট্রনকে ঠোকা দিয়ে সরিয়ে দিতে পারে। আলোর কণাধর্মী এ রকম একটা উদাহরণ হচ্ছে ফটো ইলেকট্রিক এফেক্ট যেখানে আলোর কণা বা কোয়ান্টা একটা ধাতব পদার্থকে আঘাত করে সেখান থেকে ইলেকট্রনকে মুক্ত করে দেয়। চমকপ্রদ এই ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করে আইনস্টাইন নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। তোমরা নিশ্চয় সোলার সেল দেখেছ, সোলার সেলে এই ফটো ইলেকট্রিক এফেক্ট ব্যবহার করেই সূর্যের আলোর শক্তি বিদ্যুৎশক্তিতে রূপান্তরিত হয়।

আবার অন্যদিকে তোমরা নিশ্চয় এটিও জানো যে ইলেকট্রন হচ্ছে কণা; এর ভর আছে, এর ভরবেগ আছে এটি অন্য কণাকে আঘাত করে সরিয়ে দিতে পারে। মজার ব্যাপার হচ্ছে বিজ্ঞানীরা এক সময়ে সবিস্ময়ে আবিষ্কার করলেন যে কখনো কখনো ইলেকট্রন এমন আচরণ করে যেন এটি কণা নয়, যেন এটি একটি তরঙ্গ! এর তরঙ্গদৈর্ঘ্য আছে, বিস্তার আছে শুধু তাই নয় ইলেকট্রন ঠিক তরঙ্গের মতো ব্যাতিচার পর্যন্ত করতে পারে। ইলেকট্রন এতই নিশ্চিতভাবে তরঙ্গের মতো আচরণ করে যে, ইলেকট্রনের এই বৈশিষ্ট্য কাজে লাগিয়ে রীতিমতো ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ তৈরি করা হয়েছে।

তাহলে, প্রশ্ন হচ্ছে আলো কি আসলে তরঙ্গ নাকি কণা? আবার একই সঙ্গে ইলেকট্রনের জন্যও একই প্রশ্ন করা যায়। ইলেকট্রন কি আসলে কণা নাকি তরঙ্গ?

উত্তরটা শুনলে তোমরা হকচকিয়ে যেতে পারো, কারণ উত্তর হচ্ছে: দুটোই! অর্থাৎ আলো তরঙ্গ এবং কণা দুইরকমের বৈশিষ্ট্যই বহন করে। আবার ইলেকট্রনও কণা এবং তরঙ্গ দুইরকমের বৈশিষ্ট্যই বহন করে। আলোর বেলায় বিজ্ঞানীরা প্রথমে তার তরঙ্গ বৈশিষ্ট্যের কথা জেনেছেন আর ইলেকট্রনের বেলায় প্রথমে জেনেছেন তার কণা বৈশিষ্ট্যের কথা, এটুকুই পার্থক্য। এই দ্বৈত বৈশিষ্ট্যের বিষয়টি তোমাদের প্রথমে খুব বিচিত্র মনে হতেই পারে, কিন্তু জেনে রাখো সত্যিই এটা সম্ভব। পদার্থবিজ্ঞানীরা এই বিষয়টিকে বলেন কণা-তরঙ্গ দ্বৈততা (Wave-particle Duality)


Next Post Previous Post