কোয়ান্টাম মেকানিক্স [৩.১ ]

গত শতকের প্রথম দিকে পৃথিবীর বড়ো বড়ো পদার্থবিজ্ঞানীরা কিছুতেই একটা হিসাব মিলাতে পারছিলেন না। উত্তপ্ত বস্তু থেকে যে আলো বিকিরণ হয় সেটি তোমরা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছ, এক টুকরা লোহাকে উত্তপ্ত করা হলে সেটি গনগনে লাল হয়, আরও বেশি হলে সেটি ধীরে ধীরে নীলাভ হতে শুরু করে। উত্তপ্ত বস্তুর বিকিরিত আলোর তীব্রতার সঙ্গে আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের যে একটা সম্পর্ক আছে সেটা সবাই জানতেন। বিজ্ঞানীরা উত্তপ্ত বস্তুর জন্য একটি সূত্র দিয়ে ছোটো তরঙ্গদৈর্ঘ্যে আলোর তীব্রতা সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারতেন আবার আরেকটি সূত্র দিয়ে বড়ো তরঙ্গদৈর্ঘ্যে আলোর তীব্রতা সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারতেন। কিন্তু একটি সূত্র দিয়েই উত্তপ্ত বস্তুর জন্য বিকিরিত সব তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোর তীব্রতা কিছুতেই ব্যাখ্যা করতে পারছিলেন না।

স্বাভাবিকভাবেই বিজ্ঞানীরা ধরে নিয়েছিলেন যে শক্তি অবিচ্ছিন্ন (Continuous), কিন্তু বিজ্ঞানী ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক (চিত্র ৩.১) অন্যভাবে চিন্তা করলেন। তিনি শক্তিকে অবিচ্ছিন্ন না ধরে সেটিকে বিচ্ছিন্ন (Discrete) হিসেবে বিবেচনা করলেন অর্থাৎ তিনি ধরে নিলেন শক্তিকে যত ইচ্ছে তত ছোটো অংশে বিভাজিত করা যাবে না, এর একটি ক্ষুদ্রতম কণা আছে। কম আলোর অর্থ হচ্ছে কম সংখ্যক আলোর কণা এবং বেশি

আলোর অর্থ হচ্ছে বেশি সংখ্যক আলোর কণা। তখন চমৎকারভাবে একটি সূত্র দিয়েই উত্তপ্ত বস্তু হতে ছোটো থেকে বড়ো সব তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোর জন্য শক্তির তীব্রতা ব্যাখ্যা করা সম্ভব হলো। সেই বিচ্ছিন্ন শক্তির কণাকে বলা হলো শক্তির কোয়ান্টা এবং ধীরে ধীরে যে নতুন বিজ্ঞানের জন্ম হলো সেটি হচ্ছে কোয়ান্টাম মেকানিক্স। ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিজ্ঞানীরা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জগতে বহুল ব্যবহৃত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধ্রুবরাশিটির নাম রেখেছেন প্ল্যাঙ্ক ধ্রুবক। এর মান 6.634x10-34 Js এবং একে প্রকাশ করা হয় h দিয়ে।

মানুষের চোখ যথেষ্ট সংবেদী, ধারণা করা হয় যদি মানুষের চোখ আরও দশগুণ বেশি সংবেদী হতো তাহলে আমরা খালি চোখেই আলোর বিচ্ছিন্ন শক্তির কোয়ান্টা দেখতে পেতাম! অর্থাৎ তুমি যদি অন্ধকার ঘরে বসে থাকতে এবং খুব ধীরে ধীরে একটি নির্দিষ্ট তরঙ্গের আলোর তীব্রতা কমিয়ে আনা হতো, তাহলে তুমি এক সময় লক্ষ করতে যে আলো অবিচ্ছিন্নভাবে আসছে না, বিচ্ছিন্ন আলোর বিচ্ছুরণ বা কণা হিসেবে আসছে। এই কণাগুলোর সবকটির বিচ্ছুরণের তীব্রতা সমান, তবে আলোর তীব্রতা যতই কমিয়া আনা হতো কণাগুলোর সংখ্যা ততই কমে আসত।

 

Next Post Previous Post