পদার্থের অবস্থা || অধ্যায়-৪ || অনুসন্ধনী পাঠ || নবম-বিজ্ঞান
প্রশ্ন:
পদার্থ কি?
উত্তর:
যার ভর, আকার ও আয়তন আছে এবং বল প্রয়োগে বাধা প্রদান করে তাকে পদার্থ বলে।
অথবা,
যার জড়তা আছে তাকে পদার্থ বলে।
প্রশ্নঃ পদার্থ কি দ্বারা গঠিত ?
উত্তর: পদার্থ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা
দ্বারা গঠিত।
প্রশ্নঃ অবস্থাভেদে
পদার্থ কত প্রকার?
অথবা, পদার্থ কত
অবস্থায় থাকতে পারে?
উত্তর: অবস্থাভেদে পদার্থ সাধারণত তিন
প্রকার, যথা-
১। কঠিন পদার্থ
২। তরল পদার্থ
৩। গ্যাসীয় পদার্থ
প্রশ্নঃ কঠিন
পদার্থের বৈশিষ্ট্যগুলো কি কি?
· নির্দিষ্ট ভর, নির্দিষ্ট
আকার ও নির্দিষ্ট আয়তন আছে।
· কঠিন পদার্থের কণার আন্তঃকণা আকর্ষণ বল সবচেয়ে বেশি।
· চাপ প্রয়োগে সংকুচিত হয় না, তাপমাত্রা
বৃদ্ধিতেও তেমন প্রসারিত হয় না।
প্রশ্নঃ তরল
পদার্থের বৈশিষ্ট্যগুলো কি কি?
· নির্দিষ্ট ভর ও নির্দিষ্ট আয়তন আছে, তবে
আকার নির্দিষ্ট নয়।
· এদের আন্তঃকণা আকর্ষণ বল কঠিনের চেয়ে কম।
· তাপ প্রয়োগে তরলের আয়তন বৃদ্ধি পায়।
প্রশ্নঃ গ্যাসীয়
পদার্থের বৈশিষ্টগুলো কি কি?
· নির্দিষ্ট ভর আছে, কিন্তু
আকার বা আয়তন নির্দিষ্ট নয়।
· এদের আন্তঃকণা আকর্ষণ বল অত্যন্ত কম।
· তাপ প্রয়োগে গ্যাসীয় পদার্থের আয়তন অনেক বৃদ্ধি পায়।
প্রশ্ন: গঠনভেদে
পদার্থ কত প্রকার?
উত্তর: গঠনভেদে
পদার্থ দুই প্রকার, যথা-
১।
মৌলিক পদার্থ
২।
যৌগিক পদার্থ
প্রশ্নঃ মৌলিক
পদার্থ বা মৌল কাকে বলে?
উত্তরঃ যেসকল পদার্থ
একই ধরণের কণা দ্বারা গঠিত তাকে মৌলিক পদার্থ বলে। যেমন- সোনা, লোহা, তামা,
অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন ইত্যাদি।
[বি.দ্রঃ বৈশিষ্ট্যভেদে
মৌলিক পদার্থ দুই প্রকার, যথা- ধাতু ও অধাতু]
প্রশ্নঃ যৌগিক
পদার্থ কাকে বলে?
উত্তরঃ যেসকল পদার্থ
দুই বা ততোধিক মৌলিক পদার্থ দ্বারা গঠিত তাদেরকে যৌগিক পদার্থ বলে। যেমন- পানি,
কার্বন-ডাই-অক্সাইড ইত্যাদি।
প্রশ্নঃ পরমাণু কি?
উত্তর: মৌলিক
পদার্থের বৈশিষ্ট্য রক্ষাকারী যে ক্ষুদ্রতম কণা রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে
পারে তাকে পরমাণু বলে।
প্রশ্নঃ অণু কি?
উত্তর: মৌলিক ও যৌগিক পদার্থের বৈশিষ্ট্য
রক্ষাকারী যে ক্ষুদ্রতম কণা একাধিক পরমাণু দ্বারা গঠিত কিন্তু রাসায়নিক বিক্রিয়ায়
অংশগ্রহণ করতে পারে না তাকে পরমাণু বলে।
প্রশ্নঃ
পদার্থসৃষ্টিকারি কণাতে কোন কোন শক্তি থাকে?
উত্তর:
পদার্থসৃষ্টিকারি কণাতে দুই প্রকার শক্তি থাকে, যথা-
১।
আন্তঃকণা আকর্ষণ শক্তি
২।
গতিশক্তি
প্রশ্নঃ আন্তঃপারমাণবিক, আন্তঃআণবিক, আন্তঃকণা বলতে কি বুঝায়?
উত্তর: দুটি পরমাণুর মধ্যে
আন্তঃপারমাণবিক, দুটি অণুর মধ্যে আন্তঃআণবিক এবং দুটি কণার মধ্যে আন্তঃকণা বুঝায়।
প্রশ্নঃ
আন্তঃপারমাণবিক শক্তি কি?
উত্তরঃ পরমাণুসমূহ যে
শক্তি দ্বারা একে অপরকে আকর্ষণ করে তাকে আন্তঃপারমাণবিক শক্তি বলে।
প্রশ্নঃ আন্তঃআণবিক
শক্তি কি?
উত্তরঃ অণুসমূহ যে
শক্তি দ্বারা একে অপরকে আকর্ষণ করে তাকে আন্তঃআণবিক শক্তি বলে।
প্রশ্নঃ আন্তঃকণা আকর্ষণ শক্তি কি?
উত্তর: পদার্থ
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা দ্বারা গঠিত, এই কণাসমূহ যে শক্তি দ্বারা একে অপরকে আকর্ষণ
করে তাকে আন্তঃকণা আকর্ষণ শক্তি বলে।
প্রশ্নঃ কণার গতিশক্তি কি?
উত্তর: যে শক্তি দ্বারা কণাসমূহ গতিশীল
থাকে তাকে কণার গতিশক্তি বলে।
প্রশ্নঃ কণার গতিতত্ত্ব বলতে কি বুঝ?
উত্তরঃ যে তত্ত্ব কণার আন্তঃকণা আকর্ষণ শক্তি এবং গতিশক্তি দিয়ে পদার্থের কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় অবস্থা ব্যাখ্যা করে তাকে কণার গতিতত্ত্ব বলে।
৪.২ ব্যাপন
প্রশ্নঃ ব্যাপন কাকে বলে?
উত্তর: কোনো মাধ্যমে কঠিন, তরল ও বায়বীয় পদার্থ উচ্চ
ঘনমাত্রার স্থান থেকে নিম্ন ঘনমাত্রার স্থানের দিকে স্বতঃস্ফূর্ত ও সমানভাবে ছড়িয়ে
পড়ার প্রক্রিয়াকে ব্যাপন বলে।
প্রশ্নঃ ব্যাপন হার কি?
উত্তর: একক সময়ে কোন বস্তুর ব্যাপনকে
ব্যাপন হার বলে।
প্রশ্নঃ ব্যাপন হার কিসের উপর
নির্ভর করে?
উত্তরঃ ব্যাপন হার কণার আকার ও ভরের
উপর নির্ভর করে।
প্রশ্নঃ গ্রাহামের ব্যাপন সূত্রটি
লিখ।
উত্তরঃ স্থির তাপমাত্রা ও চাপে যে কোনো
গ্যাসের ব্যাপন হার তার ঘনত্বের বমূলের ব্যাস্তানুপাতিক।
প্রশ্নঃ NH3 ও HCI এর মধ্যে কোনটির ব্যাপনের হার বেশি এবং কেন?
উত্তর: NH3 ও HCl এর মধ্যে NH3 এর
ব্যাপনের হার বেশি। এর কারণ নিম্নরূপ—
কোনো পদার্থের ব্যাপনের হার তার আণবিক ভর ও ঘনত্বের উপর
নির্ভরশীল। পদার্থের আণবিক ভর ও ঘনত্ব যত কম হবে তার ব্যাপনের হার তত বেশি হবে। NH3
এর আণবিক ভর 17 এবং ঘনত্ব 0.758g /L
HCl এর আণবিক ভর 36.5 এবং ঘনত্ব 1.62g / L অপেক্ষা কম । তাই NH3
এর ব্যাপনের হার HCI অপেক্ষা বেশি ।
৪.৩ নিঃসরণ
প্রশ্নঃ নিঃসরণ কাকে বলে?
উত্তরঃ বাহ্যিক চাপের প্রভাবে সরুছিদ্র পথে কোনো
গ্যাসের উচ্চ চাপ স্থান হতে নিম্ন চাপ স্থানে সজোরে বের হয়ে আসাকে নিঃসরণ বলে।
প্রশ্নঃ পদার্থর কোন অবস্থায়
নিঃসরণ ঘটে?
উত্তরঃ পদার্থরে গ্যাসীয় বা বায়বীয় অবস্থায় নিঃসরণ
ঘটে।
প্রশ্নঃ পাকা কাঁঠাল থেকে গন্ধ কোন উপায়ে পাওয়া যায়?
ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : পাকা কাঁঠাল থেকে গন্ধ কাঁঠালের ত্বকের ছিদ্রপথে
বেরিয়ে এসে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে ত্বকের ছিদ্রপথে গন্ধ বেরিয়ে আসার
প্রক্রিয়া হলো নিঃসরণ, আবার এই গন্ধ বের হওয়ার পর বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়া হলো
ব্যাপন। কাঁঠালের ভিতর কাঁঠাল পাকার জন্য দায়ী উপাদানের চাপ বেশি হওয়ায়
নিম্নচাপ অঞ্চলে অর্থাৎ বাইরে বেরিয়ে আসে নিঃসরণ প্রক্রিয়ায় আবার বের হওয়ার পর
উপাদানটির স্বতঃস্ফূর্তভাবে ছড়িয়ে পড়ে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় । এভাবেই পাকা
কাঁঠালের গন্ধ নিঃসরণ আর ব্যাপন দুই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পেয়ে থাকি ।
প্রশ্নঃ ব্যাপন ও নিঃসরণের মধ্যে পার্থক্য লেখ।
উত্তর : নিচে ব্যাপন ও নিঃসরণের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য তুলে
ধরা হলো :
ব্যাপন |
নিঃসরণ |
ব্যাপন একটি স্বাভাবিক
প্রক্রিয়া। |
নিঃসরণ একটি কৃত্রিম প্রক্রিয়া। |
ব্যাপনে গ্যাসের অণুগুলো নিজস্ব
স্বাভাবিক গতির জন্য পাত্রের দেয়ালের ছিদ্রপথে বের হয়ে আসে। |
নিঃসরণে চাপ প্রয়োগ করে সুক্ষ্ম
ছিদ্রপথে গ্যাসকে বের করা হয়। |
ব্যাপন একটি ধীর গতির
প্রক্রিয়া। |
নিঃসরণ একটি দ্রুত গতির
প্রক্রিয়া। |
ব্যাপন প্রক্রিয়া সর্বমুখী। |
নিঃসরণ একটি একমুখী প্রক্রিয়া। |
উদাহরণ: ফুলের সুগন্ধ ছড়ানো, ময়লার দুর্গন্ধ
ছড়ানো। |
উদাহরণ: গাড়ীর চাকার লিক দিয়ে
সজোরে বায়ু বের হয়ে আসা। |
প্রশ্নঃ CNG এর পূর্ণ রূপ কি?
উত্তর: CNG এর পূর্ণ রূপ হচ্ছে- Compressed Natural
Gas
৪.৪ পাতন এবং ঊর্ধ্বপাতন
প্রশ্নঃ পাতন কাকে বলে?
উত্তরঃ কোনো তরলকে তাপ
প্রদানে বাষ্পে পরিণত করে তাকে পুনরায় শীতলীকরণের মাধ্যমে তরলে পরিণত করার
পদ্ধতিকে পাতন বলে। অর্থাৎ, পাতন = বাষ্পীভবন + ঘনীভবন।
প্রশ্নঃ বাষ্পীভবন
কি?
উত্তরঃ কোনো তরলকে তাপ
প্রদান করে বাষ্পে পরিণত করার প্রক্রিয়াকে বাষ্পীভবন বলে।
প্রশ্নঃ ঘনীভবন কি?
উত্তরঃ বাষ্পকে শীতল করলে তা তরলে পরিণত হওয়ার
প্রক্রিয়াকে ঘনীভবন বলে।
প্রশ্নঃ পাতন প্রক্রিয়ায় কি করা
হয়?
উত্তরঃ পাতন প্রক্রিয়ায় কোনো মিশ্রণ থেকে
উপাদনসমূহকে পৃথকীকরণ করা হয়।
প্রশ্নঃ Crude Oil কি?
উত্তরঃ তেলের খনি থেকে যে তেল উত্তোলন করা হয় তাকে
Crude oil বা অপরিশোধিত তেল বলে।
প্রশ্নঃ আংশিক পাতন কাকে বলে?
উত্তরঃ যে পাতন প্রক্রিয়ায় পাতন ফ্লাক্স ও শীতকের
মধ্যে আংশিক কলাম স্থাপন করে কাছাকাছি স্ফুটনাঙ্ক বিশিষ্ট দুই বা ততোধিক তরল
পদার্থের মিশ্রণ হতে তার উপাদানগুলোকে পৃথক করা হয় তাকে আংশিক পাতন বলে।
প্রশ্নঃ ঊর্ধ্বপাতন কাকে বলে?
উত্তরঃ যে পাতন প্রক্রিয়ায় কোন কঠিন পদার্থকে তাপ
প্রয়োগ করলে সেটি তরলে পরিণত না হয়ে সরাসরি বাষ্পে পরিণত হয় তাকে ঊর্ধ্বপাতন বলে।
প্রশ্নঃ ঊর্ধ্বপাতিত পদার্থের
উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ ঊর্ধ্বপাতিত পদার্থ হচ্ছে- নিশাদল
প্রশ্নঃ নিশাদলকে ঊর্ধ্বপাতিত পদার্থ বলা হয় কেন?
ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : যেসব কঠিন পদার্থকে উত্তপ্ত করলে তরলে পরিণত না
হয়ে সরাসরি গ্যাসে পরিণত হয় তাদেরকে উর্ধ্বপাতিত পদার্থ বলে। নিশাদল (NH4Cl
) কে তাপ দিলে এটি কঠিন অবস্থা থেকে সরাসরি বাষ্পীয় অবস্থায় পরিণত হয়। এজন্য
নিশাদলকে ঊর্ধ্বপাতিত পদার্থ বলা হয় ।